উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
পুরো বিশ্বে ত্রাস ছড়িয়েছে অনলাইনভিত্তিক গেম ‘ব্লু হোয়েল’। ৫০ দিনে ৫০ ধাপে এই গেমটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখেই ঠেলে দেয় প্রতিযোগীকে। সম্প্রতি ঢাকায় অপূর্বা বর্মণ স্বর্ণা (১৩) নামে হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী এই গেমের ফাঁদে পড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করায় শঙ্কিত এ দেশের অভিভাবকেরাও।
সাধারণত অবসাদগ্রস্ত-বিষণ্ন কিশোর-কিশোরীদের আকৃষ্ট করে এই গেম। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে এই গেমের ফাঁদে পড়ে যতজনের প্রাণ ঝরেছে, তার মধ্যেও বেশিরভাগই কিশোর-কিশোরী। সেজন্য দেশের অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে মনোবিদরা বলছেন, যেন তাদের শিশু ও কিশোর-কিশোরী সন্তানদের ওপর নজর রাখা হয়। বিশেষত যারা ইন্টারনেট-স্মার্টফোন ব্যবহার করে।
** Blue whale (ব্লু হোয়েল) এর অর্থ নীল তিমি। মৃত্যুর আগে নীল তিমিরা সাগর থেকে তীরে উঠে আসে। সেজন্য কেউ কেউ ধারণা করেন, তিমিরা আত্মহত্যা করে। এ কারণে এই গেমের নামকরণ হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’। এই গেম কারো পাঠানো গোপন লিংকের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইসে। একবার ইনস্টল হয়ে গেলে ডিভাইস রিসেট করা ছাড়া আর রিমোভ করা যায় না গেমটি। পুরো গেম নিয়ন্ত্রণ করে আড়ালে থাকা একদল কিউরেটর।
** এই গেমে প্রতিযোগীকে মোট ৫০টি আত্মনির্যাতনমূলক ধাপ শেষ করতে হয়। প্রথম দিকের ধাপগুলো তুলনামূলক অ্যাডভেঞ্চারাস, মজার ও সহজ মনে হলেও শেষ ধাপগুলো একেবারেই ভয়ঙ্কর। কিন্তু প্রথম দিকে মজা পেয়েই প্রতিযোগী কিশোর-কিশোরীরা আসক্ত হয়ে পড়েন এতে। আর সেই আসক্তির সুযোগ নিয়েই গেমটি তাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যায় শেষ পরিণতি মৃত্যুতে।
** এই গেমের প্রথম ১০টি ধাপে প্রতিযোগীকে বেশ আকর্ষণ করার মতো। যেমন মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে ভৌতিক মুভি দেখা, চিৎকার-চেঁচামেচি করা, ভোরে ছাদের কিনারা ধরে হাঁটাহাঁটি করা। এরপর ক্রমেই মোহাবিষ্ট করে একে একে আসতে থাকে শরীরে একাধিক সুঁই বিদ্ধ করা, নিজের হাত রক্তাক্ত করে তিমির ছবি আঁকা ইত্যাদি। এই গেমের ছলেই কিউরেটররা হাতিয়ে নেয় প্রতিযোগীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনেক তথ্য। শেষ পর্যায়ে প্রতিযোগী বুঝতে পারে যে, এই গেম তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য মুক্তি পেতেও চাইবে সে। তখনই ফাঁদ পাতবে কিউরেটর। হাতিয়ে নেওয়া তথ্য ব্যবহার করেই প্রতিযোগীর পরিবারের এমনকি মা-বাবার ক্ষতি করার হুমকি দেবে। বলবে, মুক্তি পেতে চাইলে তার কথা মতো কাজ করতে হবে। প্রতিযোগীও উপায় না পেয়ে কিউরেটরের কথা অনুযায়ী ধাপ অতিক্রমে এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে আত্মহত্যার দিকে। সেটা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে, বা গায়ে আগুন ধরিয়ে অথবা গলায় ফাঁস দিয়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে।
** ২০১৬ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়া এই প্রাণঘাতী গেমের কিউরেটর সন্দেহে সে বছরই ফিলিপ বুদেকিন নামে এক তরুণকে পাকড়াও করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণ স্বীকার করেন, এই গেমের শিকার যারা, তারা সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে সমাজ সংস্কার করছে ‘ব্লু হোয়েল’।
কেউ ব্লু হোয়েলে আসক্ত হলে চিনবেন যেভাবে
ব্লু হোয়েল খেলায় আসক্ত কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত অবসাদগ্রস্ত। নিজেদের সবসময় লুকিয়ে রাখে। বেশিরভাগ সময়ই তারা থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চুপচাপ থাকলেও মাঝেমধ্যে অপরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে। গভীর রাতে ছাদে বেড়াতে যায়। শরীরকে নানাভাবে আঘাত করে। যে স্মার্ট ডিভাইস বা স্মার্টফোনে গেমটি খেলে, সেটি কেউ ধরলে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।
আপনার সন্তান বা পরিচিত কেউ যেন এ ধরনের মারণনেশায় আসক্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল করুন। তাদের সময় দিন। অন্য বন্ধু-স্বজনদেরও সময় দিন। জীবনকে ভালোবাসুন।
পাঠকের মতামত